মার্চ মাস থেকে করোনামহামারীর জন্য গৃহবন্দী হয়ে শরীর মন যেন জরাকীর্ন হয়েছিল । এই দীর্ঘ সময় গৃহবন্দীদশা ও করোনাপ্রকোপ কমে যাওয়ায় এবং সেই সাথে এই নিউনরমাল এর সাথে মানিয়ে নিয়ে একটা ট্যুর অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল । আর তাই আগস্টের শেষ সপ্তাহে আমি ,কলিগ জাফর ভাই, বন্ধু শাহজাহান ও তার বন্ধু ইলিয়াস সিলেট যাওয়ার প্ল্যান করলাম । ২৭ ই আগস্ট বৃহঃবার অফিস শেষ করে রাত ১১.০০ টার বাসে আমরা যাত্রা শুরু করি সিলেটের উদ্দেশ্যে, সকাল ৬.৩০ টার আমারা সিলেট কদমতলি বাসস্টন্ডে নামে সিনজি করে আম্বরখানা মোড়ে যাই । আম্বরখানা মোড়ে সকালের নাস্তা শেষে হোটেল টি ল্যান্ডে ব্যাগপ্যাক রেখে ৮:০ টার সময় সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ করি । আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল রাতারগুল- এই সেই রাতারগুল যা দেখার জন্য আমি অনেক বার প্ল্যান করেছি , রাতারগুলের ছবি/ভিডিও যে কতবার দেখেছি তা বলার না । রাতারগুল যাওয়ার পথে দুপাশের চা বাগানের মাঝদিয়ে রাস্তাটা দেখতে খুবই চমৎকার লাগছিল । ১/১.৫ ঘন্টা পর আমরা রাতারগুল নোকাঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় করে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের দিকে যাত্রা শুরু করি । খুব সম্ভবত বাংলাদেশের এটিই একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট, যখন বনের ভিতর প্রবেশ করি আমার কাছে অনেক নান্দনিক লাগছিল ঘন গাছগাছালিগুলো পানির মধ্যে,পাখির কিচির মিচির, কোনরকম যাত্রিক কোলাহল নেই নিস্তব্ধ পরিবেশে আমরা ঘুরছি। যদিও মাঝে মাঝে আমাদের মত কিছু ট্রাভেলারের কণ্ঠে সুর ভেসে আসছিল । আমরা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে রাতারগুলের পুর্ন ভিউটা দেখে ঘাটের দিকে ব্যাক করার জন্য রওনা করলাম, এই সময় আমরা বেসুরা গলায় একটু সুর-সঙ্গিত পরিবেশনা করলাম, বলে রাখা ভালো আমাদের মাঝি ১০ বছর বয়সী, সেও খুব ভালো গান করে আমাদের সাথে সেও তাল মিলালো , অধিকাংশ মাঝিকেই আমরা দেখলাম ছোট বাচ্চা ছেলেরা । নোকার ৭৫০ টাকা দিয়ে আমরা আমাদের সিএনজি করে বিছনাকান্দির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম, আমরা হাদারপাড় যেতে চাইলেও ড্রাইভার সাহেব রাস্তা খারাপের অজুহাতে আমাদের পীরেরবাজার নিয়ে যায়। পীরেরবাজার খাবারের ভালো হোটেল নাই , আমরা কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম । এবার ইঞ্জিনচালিত নৌকাভাড়া করলাম বিছনাকান্দি+পান্থুমাই দেখার জন্য , এই বার আমাদের সাথে এক ৩ জন নতুন সঙ্গী যুক্ত হল , তারা শুধু ৩ জন থাকায় আমাদের সাথে একত্রে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করল এবং আমরা যাত্রা শুরু করলাম প্রায় ২ঃ০০তার দিকে ।
নৌকা চলতে লাগলো, পাথর বোঝাই নৌকা চলাচলের জন্য অনেক বড় বড় ঢেউ হচ্ছিল । আমাদের প্রায় ১ ঘণ্টার মত সময় লাগে বিছনাকান্দি পৌছাতে, বিছনাকান্দি পৌঁছানের পুর্বেই আমরা বড় ২ টা পাহাড় আর তার পাশ দিয়ে মেঘের আনাগোনা দেখে বিমোহিত হতে লাগলাম । আস্তে আস্তে আমরা ঐ পাহাড়গুলোর কাছাকাছা আসতেই আমাদের নৌকা ঘাটে নামিয়ে দিল , ১ ঘন্টা সময় নিয়ে আমরা গোসল করে দ্রুত পান্থুমাই দেখার জন্য রওণা করলাম । পান্থুমাই যাওয়ার নদীটা ছোট , দুপারের ছোট ছোট পিউর গ্রামীণ জনপদ , পাথর তোলার ও মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম , মাঝে নদীর একপাশের পাহাড়ের পাশ দিয়ে মেঘের দৃশ্যগুলো দেখতে বেশ ভালই লাগছিল । কিন্তু নদীটার গভীরতা কম থাকার মাঝে মাঝেই নৌকা মাটীর সাথে আটকে যাচ্ছিল , একবারতো নৌকার ফ্যানই খুলে গেল , এতে করে আমাদের রোমাঞ্চটা আরও বেড়ে যাচ্ছিল , এমতাবস্থায় আমাদের সবার মনে দ্বিধা লাগছিল যে আমরা কি শেষ পর্যন্ত পান্তুমাই দেখতে পারবো ঐ বিকেল প্রায় গোড়ানোর অবস্থা , অবশেষে প্রায় ১.৫/২.০০ ঘন্টা পর আমরা পান্তুমাই এসে পৌঁছলাম , হাটূ পানির নদী,সচ্ছ পানি আর দুর থেকে দেখা পান্থমাই দেখে আমাদের ক্লান্তি দুর হল। করোনার কারনে আমরা ডিঙি নৌকা দিয়ে পান্তুমাই এর কাছে যেতে পারলাম না । তাতে কি দুর থেকেও তো দেখা তাই না ☹
অবশ্য একটা আফসোস লাগছিল আমার মনে আমাদের দেশের সব সৌন্দ্যযগুলো সব ভারতের সীমানায় দখল করে রেখেছে । এরপর নৌকা ঘাটে এসে পৌছলাম স্বন্ধার সময় । নৌকা ভাড়া নিয়েছে ২৫০০টাকা । এরপর সিএনজি থেকে আমরখানা ৮:০০ টার দিকে নেমে হোটেলে ভেজা কাপড় রেখে শাহজালাল রঃ এর মাজার দর্শন ও রাতের খাবার সেরে ক্লান্ত স্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুম 😊